Tabij | তাবিজ

Muhammad Jamal Uddin
0

যত

তাবিজ আর তামিমার মধ্যে পাথ্ক্য


 হাদীসে এরুপ মর্মে বর্ণিত আছে- "যে দেখেছে, এবং যে দেখেনি, উভয়ের বিশ্বাস/সামাঝ এক নয়।"

অনেক অনেক দলীল সাধারণ মানুষের মাইন্ডসেটে যা ক্লিয়ার করতে পারে না, তা নিচের চিত্রটি ক্লিয়ার করতে সক্ষম।


তাবিজ পড়াকে অনেকে শিরক বলে! তারা তো না সুন্নাহ সঠিকভাবে অধ্যয়ন করেছেন, না ফিকহ। এবং না ব্যবহার করেছেন নিজেদের আকল! আকল ব্যবহার করলে 'কুফরী কালামের জিনিস' কে কিভাবে "আল্লাহর কালাম দ্বারা  তৈরীকৃত জিনিস" এর সাথে তুলনা করে একজন মুসলিম? 🙂


অনেকে এতোটা নিচে নামেন যে হাদীসের অনুবাদে খেয়ানত করে, তারা হাদীসের আরবী এবারতে 'তামীমা'(যা মুশরিকরা ব্যবহার করত আইয়্যামে যাহেলিয়্যাতের সময় থেকেই) কে বাংলায় 'তা'বীজ' বলে প্রচার করে! ফলে সাধারণ মানুষের সহজ সরল Mindset যুগ যুগ ধরে মুসলিমদের কৃত একটি আমল কে প্রশ্নের সম্মুখীন করে দেয়!


অথচ, তা'ওয়ীজ শব্দটাই আলাদা। হাদীসে যেখানে গলায় ঝুলাতে নিষেধ করা হয়েছে সেটা তাবীজ নয়, 'তামিমাহ' । যারা এরুপ করে পবিত্র সুন্নাহর সাথে খেয়ানত করে শুধুমাত্র নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের জন্য, এবং সাধারণ মুসলিমদের সাথে Mind Game খেলে, তাদের ওপর আল্লাহর লা'নত।


 কেননা- "মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা'নাত!"


⤵️⤵️⤵️

🚩 নিচে গবেষক গণের বোঝার সুবিধার্থে কিছু দালিলীক বিশ্লেষণ সংযুক্ত করে দেয়া হোলো-


১. তাবীজ ও তামিমার পার্থক্য


বিষয় তাবীজ (تعويذ) তামিমা (تميمة)


সংজ্ঞা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দোয়া, বা মাশরূর যিকির লিখে গলায় বা বাহুতে ঝুলানো। এমন কিছু (গুটিকা, দানা, হাড়, চামড়া, সুতা ইত্যাদি) যা মানুষ কুসংস্কারবশত বিপদ বা রোগ থেকে বাঁচার জন্য ঝুলায়, যেখানে কুরআন বা আল্লাহর নাম নেই।


উদ্দেশ্য আল্লাহর কালাম ও দোয়ার বারকাত পাওয়া। বস্তুটিকেই অদৃশ্য শক্তি মনে করে সুরক্ষা পাওয়া।

শরীয়তের হুকুম কুরআন ও আল্লাহর নাম থাকলে অধিকাংশ সালাফ ও সুন্নী উলামার মতে জায়েজ (শর্ত: শিরকীয় কিছু না থাকে, কুরআনকে অসম্মান না হয়)। সর্বসম্মতভাবে হারাম এবং শিরকের আশঙ্কাজনক কারণ, কুসংস্কার।


তামিমা হচ্ছে কুফরী কালাম, হাঁড়, পাথর, ডাল জাদুর সরঞ্জাম যা আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য ছাড়া কুসংস্কার এর জন্য বা কুফরী করার জন্য করে থাকে। 

আরবরা ইসলাম আসার আগে ডাল, শেকড়, মৃত জন্তু বা কংকালের হাড় পরিধান করতো। এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। যারা তামিমাকে তাবিজ অর্থ করে তারা ইসলামের মধ্যে খিয়ানত কারী। 


২. হাদীস — তামিমা ঝুলানোর নিষেধাজ্ঞা


📜 হাদীস ১

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ:

"إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ"

— (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: 3883; ইবন মাজাহ: 3530; সহীহ: ইমাম আহমাদ, ইবন হিব্বান)


বাংলা অর্থ:

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি:

"রুকইয়া (শিরকীয় ঝাড়ফুঁক), তামিমা এবং তিওয়ালা (যাদু জাতীয় প্রেম-বন্ধন) শিরক।"


📜 হাদীস ২

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ:

"مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَلَا أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ"

— (মুসনাদ আহমাদ: 17440; সহীহ: শায়খ আলবানী, সহীহ আল-জামি: 6394)


বাংলা অর্থ:

উকবা ইবন আমির (রাঃ) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি:

"যে তামিমা ঝুলাবে, আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন না।"


📜 হাদীস ৩

"مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ"

— (মুসনাদ আহমাদ: 16969; হাকিম: 4/417; সহীহ বলেছেন আলবানী)


বাংলা অর্থ:

"যে তামিমা ঝুলালো, সে শিরক করলো।"


ব্যাখ্যা: এখানে "تَمِيمَة" দ্বারা বোঝানো হয়েছে—যে বস্তু কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম ছাড়া, শুধুমাত্র কুসংস্কারবশত ব্যবহার হয়।


৩. সাহাবায়ে কেরামের কুরআনযুক্ত তাবীজ ব্যবহারের প্রমাণ


📜 প্রমাণ ১ — আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রা.

إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو كَانَ يُعَلِّمُ بَنِيهِ الْكِبَارَ مِنْهُمُ الْقُرْآنَ، وَمَنْ لَمْ يَبْلُغْ مِنْهُمُ الْحُلُمَ كَتَبَ لَهُ فِي صَحِيفَةٍ فَعَلَّقَهُ فِي عُنُقِهِ

— (مصنف عبد الرزاق: 7924; الحاكم في المستدرك: 4/417)


বাংলা অর্থ:

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) তার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দিতেন, আর যারা বালেগ হয়নি, তাদের জন্য কুরআনের কিছু আয়াত লিখে দিতেন এবং গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।


📜 প্রমাণ ২ — ইমাম আহমদ ও ইমাম বুখারীর উক্তি


ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন:

"যদি তাবীজে আল্লাহর কালাম থাকে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।" (مسائل الإمام أحمد برواية عبد الله: 444)


ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর "আদাবুল মুফরাদ"-এ তাবীজের প্রসঙ্গে কুরআনযুক্ত তাবীজের অনুমতি দিয়েছেন (باب تعويذ المريض).


📜 প্রমাণ ৩ — ইমাম নববী (রহ.) এর মতামত

"তাবীজে যদি কুরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম থাকে এবং তা শরীয়তবিরোধী কিছু না হয়, তাহলে তা জায়েজ।" (شرح مسلم, নববী)


✅ সারসংক্ষেপ:


তামিমা = কুসংস্কারপূর্ণ বস্তু → সহীহ হাদীসে হারাম ও শিরক বলে নিষেধ।


তাবীজ (আয়াত বা দোয়া লেখা) → সাহাবায়ে কেরাম রা. এর আমল ও বহু সালাফের মতে জায়েজ, তবে শর্ত হলো: কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কিছু না থাকা এবং সম্মান রক্ষা করা।


(দালীলিক বিস্লেষণের এ লেখাটি সংকলিত)


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!